আপনার লিংকটি তৈরী হচ্ছে
©সংগৃহীত
গল্পঃনীল রহস্য
পর্ব ৮
নিহান আর মিরা দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলের শেষ মাথার একটা ঝিলের সামনে,, ঝিলের পানি পুরো কুঁচকুঁচে কালো আর এর থেকে একটা পঁচা দূর্গন্ধ বেড় হচ্ছে। মিরা নাক মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে, নিহান কে বললো ;
- কোথায় নিয়ে এসেছিস আমাকে?? এই পঁচা ঝিলে কি দেখাতে নিয়ে এসেছিস??
- আপাত দৃষ্টিতে এটাকে পঁচা ঝিল মনে হলেও এটা কিন্তু মুটেও পঁচা নয়।।
- মানে??
- মানে জানতে হলে এখন এই ঝিলে নামতে হবে আমাদের।।
- কিহ??? ছিহ!! আমি নামবো না তুই নাম।।
- মিরা প্লিজ চল এখানে গেলে তুই অনেক কিছু জানতে পারবি।
- আমি পারবো না এই গন্ধে আমার শরীর গুলিয়ে যাচ্ছে।।
- প্লিজ চল!! বিশ্বাস কর এটাতে নামলেই তোর ভুল ধারণা ভেঙে যাবে।।
- মিরা একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিহানের সাথে ঝিলে নামে।। মিরা নাক মুখ খিচে, চোখ বন্ধ করে পানিতে দাঁড়িয়ে আছে।।
- নিহান বললো মিরা চোখ খুলো।।
**মিরা চোখ খুলে অবাক হয়ে গেলো।। ঝিলের পানি আর কুচকুচে কালো নয় ঝিল এখন নীল পানিতে ভরপুর।। নীলা মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো, এতো সুন্দর পরিবেশ সে আগে কখনো দেখে নি,, ঝিলের জলে হাজার খানেক পদ্ম ফুটে আছে চারপাশটা এতো সুন্দর আর মনোরম যে, সে চুখ ফিরাতে পারছেনা।। ঝিলে সাঁতার কাটছে সাদা সাদা কতগুলো হাঁস।। জঙ্গলের চারপাশটা দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো জঙ্গল নয় এটা একটা বাগান।।
- কি হলো? কেমন লাগছে এখন??
- অনেক ভালো।। এ তুই কোথায় নিয়ে এসেছিস আমাকে।। এতো সুন্দর জায়গায় আমি আগে কখনো যাইনি।।
- ঝিলের মধ্য ভাগে তাকাও মিরা।।
- মিরা তাকিয়ে দেখলো ঝিলের মধ্য ভাগে ফুটে আছে একটা নীল পদ্ম।। সে আরও অবাক হলো নিহান এই পদ্ম টা বাকি সবগুলো থেকে আলাদা কেন??
- এইটা একটা জাদুকরী পদ্ম যা ২০ বছর পর পর ফুটে। এই নীল পদ্ম যদি কোনো অশুভ শক্তির হাতে যায় তাহলে পৃথিবীতে প্রলয় নেমে আসবে।।
- এই ফুলটার সন্ধান কিভাবে পেলে নিহান?
- মিরা পৃথিবীতে যখন অশুভ শক্তির বিস্তার বেশি হয় তখন যুগ যুগ ধরে শুভশক্তিরা জন্ম নেয়। সেই অশুভশক্তি কে বদ করার জন্য। আর তুমিই হলে এই যুগের সেই শুভশক্তি আর এই নীল পদ্ম ও শুধু তোমার জন্যই ফুটেছে!!
- কিন্তু আমিতো এখনো আমার সম্পর্কে কিছুই জানিনা,,কি এমন শক্তি আছে যা দিয়ে আমি অশুভ শক্তিকে বদ করতে পারবো আমাকে প্লিজ বল নিহান।।
- সেসব জানতে হলে তোমাকে অতীতে জেতে হবে।।
- তাহলে তাই হোক, চল তোমার বাবার কাছে আমি এখনই যেতে চাই।
- মিরা দাঁড়াও তার আগে ওই নীল পদ্ম কে হাসিল করে তোমার ভেতরে ধারণ করতে হবে।
- ঠিক আছে আমি ওটা নিয়ে আসছি।
- দাঁড়াও মিরা এতোটাও সহজ নয়। ওই নীলপদ্ম কে যুগ যুগ ধরে পাহারা দিয়ে আসছে একটা নাগ।। যার এক নিঃশ্বাসে কয়েকশো মানুষের প্রাণ চলে যাবে এতোটাই বিষাক্ত।
- তাহলে কিভাবে ওটা পাবো?
- নিহান মিরাকে বলে তোমাকে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছি যেটা কেবল শুভশক্তিই উচ্চারণ করতে পারবে, কোনো অশুভশক্তি যদি এটা উচ্চারণ করে তাহলে তার জিহবা পুড়ে যাবে।। ঝিলের মধ্য ভাগে গিয়ে যখন নীলপদ্ম ছুবে তখনই ওই নাগ টা পানির তলদেশ থেকে উঠে আসবে। তখন এই মন্ত্রটা উচ্চারণ করবে নাগ টা বুঝে যাবে তুমি শুভশক্তির প্রতিক সে তোমাকে নীলপদ্ম আনতে বাধা দিবে না। নিহান মিরাকে মন্ত্রটা শিখিয়ে দেয় আর বলে, মিরা সাবধান মন্ত্রে ভুল করলে কিন্তু তুমি আর এই ঝিল থেকে জীবিত উঠে আসতে পারবে না।।
- আচ্ছা নিহান তাহলে আমি যাচ্ছি। মিরা নেমে যায় ঝিলে, ঝিলের মধ্য ভাগে গিয়ে মিরা যেই নীল পদ্ম টা স্পর্শ করতে যাবে তখনই সেখানে বিশালাকৃতির এক কালো নাগ উঠে আসে, তাকে দেখে অনেক রাগান্বিত মনে হচ্ছিলো। মিরা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
- মিরা মন্ত্র টা পড় তারাতাড়ি।
- মিরা ভয়ে ভয়ে মন্ত্রটা উচ্চারণ করতেই নাগ তার সামনে মাথা নুইয়ে দেয়। মিরা তারাতাড়ি নীল পদ্ম টা স্পর্শ করে আর সাথে সাথে সেটা অদৃশ্য হয়ে যায়।
মিরা নিহানের দিকে তাকায় অবাক হয়ে।
- মিরা উঠে আসো তোমার কাজ শেষ ওই নীল পদ্ম তোমার ভেতরে প্রবেশ করেছে।
মিরা উঠে আসে ঝিল থেকে, নিহান এখন আমাকে বল আমি যার কাছে বড় হয়েছি সে এখন কোথায়??
- ঠিক আছে চলো আমি তার কাছে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
- নিহান তুমি কিভাবে জানো তিনি এখন কোথায় আছেন?
- আমি অনেক কিছুই জানি যা তোমার এখনো অজানা।
- তাহলে আমাকে বলছো না কেন? প্লিজ আমাকে বলো।।
**তাহলে শোন........
তোমাকে ওইদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় পৌছে দেওয়ার পর আমি সোজা তান্নীদের বাসায় চলে যাই। সেখানে আমার প্রথম সন্দেহ হয় একটা অদ্ভুত পুতুল দেখে, সেটা আমি আমার বাসায় নিয়ে আসি। তারপর আমার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটে আমি বুঝতে পারছিলাম কেউ আমার উপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করতে চাইছে। সন্দেহ তখন বাস্তব মনে হয় যখন আমার বেলকনিতে একটা ছায়া দেখতে পাই। পুতুলটা নেড়েচেড়ে দেখার সময় একটা সুচ আমার আঙুলে বিধে যায়। আর তখনই তোমার কল আসে, আমি রিসিভ করে কথা বলি, তুমি বলো রাত ১২ টায় দেখা করতে তখন আমার সন্দেহ হয় এটা তুমি নও। ওই ছায়াটা তখনও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি বুঝতে পারি সে পুরোপুরি আস্বস্ত নয় তাই আমি ইশার আজান দেয়ার সাথে সাথে অদ্ভুত আচরণ করি। যা দেখে সে বিশ্বাস করে আমার উপর জাদুর প্রভাব পরেছে। রাত ১২ টায় আমি তোমার বাসার নিচে আসি তারপর তোমার রুপ ধরা সেই মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করি। তোমার রুপ ধরা সেই মেয়ে ছিলো একটা আত্মা সে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলেই আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে সে আমাকে ভয় দেখাতে চায় কিন্তু আমি উল্টো তাকে আরও কনফিউজড করে দেই। সে আমাকে সেখানে ফেলে চলে যায় কিন্তু আমিও কম কিসে আমি বাবার শিখিয়ে দেওয়া মন্ত্রবলে তার আস্তানা খুঁজে বেড় করে তার পিছু পিছু সেখানে পৌছে যাই।
সেখানে গিয়ে দেখি তোমার মা কুমুদিনী আর সেই আত্মা টা কথা বলছিলো। আমাকে সেখানে উপস্থিত দেখে দুজনেই ঘাবড়ে যায়।
আমরা চলে যাবো ফ্লাসব্যাকে!!!!
আত্মাটি বলে;
- তুই এখানে কিভাবে এলি? ঠিক আছে এসেই যখন পড়েছিস তাহলে আর ফিরে যেতে পারবিনা বলেই হাসতে লাগলো।
- সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে। আগে বলেন আন্টি আপনি এখানে কেন? আপনি মিরার মা হয়ে কেন তার ক্ষতি করতে চাইছেন??
- আন্টি বললেন ; আমি কেন মিরার ক্ষতি করবো!? ক্ষতি তো তুমি করতে চাইছো নিহান! কেন তুমি মিরার সাথে এমন করছো?
- আমি কি করেছি?
- কেন গত এক মাস ধরে মিরার সাথে অদ্ভুত ঘটনা গুলো তাহলে কে ঘটাচ্ছে?
- সেটা আমি কি করে জানবো? আমিতো মিরার সাথে ছোট বেলা থেকেই আছি। মিরা আমার দ্বায়িত্ব আমি কেন মিরার ক্ষতি চাইবো।
- তাহলে কে??
- সেটা আপনি বলুন.... আপনি কেন মিরার অগোচরে এসব করে বেড়ান? আর এই আত্মা আপনার কি হয়??
- তোমাকে আমি কেন বিশ্বাস করবো?
- আমি হলাম শুভশক্তির রক্ষক। মিরাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। এবার আপনি বলুন...
ঠিক আছে তাহলে শুনো তবে......
মায়া আর আমি ছিলাম দুই বোন,মায়া থেকে আমি ছিলাম ৫ বছরের বড়। আমাদের বাবা ছিলেন সেই সময়ের নাম করা তান্ত্রিক, তিনি ছিলেন একজন ভালো তান্ত্রিক তিনি জনসেবা করেই তার জীবন পার করছিলেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি আমাদের তান্ত্রিক বিদ্যা শিখাতেন। আমরা আস্তে আস্তে দুই বোন বড় হতে থাকি। তন্ত্রসাধনার প্রতি আমার চেয়ে মায়ার ছিলো বেশি ঝুক। সে অল্প বয়সেই তান্ত্রিক বিদ্যা লাভ করে ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করতে শুরু করে। আর অপরদিকে আমি শুধু তান্ত্রিক বিদ্যা পর্যন্তই শিক্ষা লাভ করি।
আমার বিয়ে হয়ে যায় বাবার এক তান্ত্রিক ভক্তের সাথে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমার ঘর আলো করে জন্ম নেয় মাহিন। আমার দিন ভালোই কাটছিলো নিজেকে এসব তন্ত্রসাধনা থেকে দূরে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু মায়া ততদিনে ডাকিনীবিদ্যা লাভ করে একজন ডাইনিতে পরিনত হয়। সে নিজের যৌবন ধরে রাখতে, কুমারী মেয়েদের প্রতি অমাবস্যায় বলি দিতো কালের নামে।। মাহিন যখন ২ বছরের তখন আমার এক কন্যা সন্তান হয় তার নাম রাখি মারিয়া। মারিয়া, মাহিন আর আমার স্বামী কে নিয়ে আমার ছোট্ট একটা সুখের সংসার ছিলো।। এভাবে কেটে যায় অনেকগুলো বছর মায়া আরও ভয়ংকর ডাইনিতে পরিনত নয়।। মায়ার মাথার চুলগুলো একেকটা ভয়ংকর কালো সাপে পরিনত হয়। সে একটা বড় যজ্ঞের আয়োজন করে সেখানে ২১ টি নবজাতকের বলি দিয়ে কালকে সন্তুষ্ট করে, তারপর কালের থেকে একটা ছেলে সন্তান কামনা করে।। মায়া ৩ মাসের মাথায় জন্ম দেয় কালপুত্রকে।।
কালের থেকে সন্তান লাভের পর মায়ার লোভ আরও বেড়ে গিয়েছিল। সে চেয়েছিলো অমরত্ব লাভ করে এই পৃথিবীতে কালের শাসন কায়েম করতে।।
মায়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পুরো গ্রামবাসী,,, অনেকেই বাবার কাছে বিচার নিয়ে আসতো কিন্তু বিচার নিয়ে যারাই আসতো, তারা আর প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারতো না,মায়ার হাতে নৃশংস ভাবে খুন হতো। বাবা এর প্রতিবাদ করলে মায়া বাবাকেও হত্যা করে। আর এর কারণে আমার সাথে মায়ার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।।
মায়া তখন কিভাবে অমরত্ব লাভ করা যায় আর কি করে এই পৃথিবীতে কালের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই লক্ষ্যে কালের উপাসনায় মগ্ন। মায়া জানতে পারে নীলাভ্র আর নীলাদ্রি নামের এক দম্পতির ঘরে জমজ বাচ্চার জন্ম হয়েছে, তাদের একটা বাচ্চার মধ্যে অলৌকিক শক্তি লুকিয়ে আছে। সেই বাচ্চাকে খুঁজে যদি বলি দিয়ে দেয়, আর নীল ঝিলের সন্ধান পেয়ে যায়, তাহলে সে নীল পদ্ম পেয়ে যাবে,আর সে অমরত্ব লাভের সাথে এই পৃথিবীতে কালের শাসন কায়েম করতে পারবে।।
মায়া সেই শক্তি কে কোনো ভাবেই খুঁজে পাচ্ছিলো না, তাই সে আমার স্বামীর সাহায্য চায়। তিনি ছিলেন একজন ভালো তান্ত্রিক, তিনি আমার বাবার মতোই জনসাধারণের সেবা করতেন।। আমার স্বামী এতে অস্বীকৃতি জানালে সে আমার স্বামী কে বলে এর ফল খারাপ হবে।। কিন্তু আমার স্বামী তাতেও রাজি হননি, আমরা স্বাভাবিক ভাবেই জীবনযাপন করছিলাম।
আমার ছেলে মেয়েকে দূরে রেখে মানুষ করেছিলাম, তাদেরকে এইসব তন্ত্রসাধনার ধারে কাছেও আসতে দেইনি। ওদেরকে একটা সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলাম আমি আর ওদের বাবা। ২০ বছর বয়সে মেয়েকে একটা সাধারণ পরিবারে বিয়ে দিই। আমার মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী ছিলো গুনেও তেমনই ছিলো, কিন্তু মায়া আমার স্বামীর উপর প্রতিশোধ তুলতে ধিরে ধিরে আমার মেয়ের জীবনটাকে নরক বানিয়ে দেয়।
সে আমার মেয়ের শশুর বাড়ির সবার উপর ডাকিনীবিদ্যা জাদু করে।। আমার মেয়েটার জীবন নরকে পরিনত করে।। আমার স্বামী আর আমি মায়ার পায়ে পরে বলি আমাদের মেয়েকে এই ভয়ংকর জাদু থেকে মুক্তি দিতে। সে বলে তার কাজ করে না দিলে সে এসব থামাবে না, তাই আমার স্বামী একরকম বাধ্য হয়ে ওই অলৌকিক শক্তির সন্ধান করেন।। এর জন্য আমার স্বামী ২৯ দিন নির জলা উপবাস করেন, আর নিজের শরীরের রক্ত প্রতি মঙ্গলবার কালো কাককে পান করান। এভাবে ২৯ দিন কঠিন তপস্যার পর সেই শক্তির সন্ধান মিলে।
আমার স্বামী সেই নীল ঝিলের সন্ধান ও পান কিন্তু সেই ঝিল থেকে নীল পদ্ম আনতে ব্যর্থ হন। কারণ নীল পদ্ম শুধু মাত্র সেই শুভশক্তি ই নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে। আর শুভ শক্তি কে মারার পরেই সে নীল পদ্ম পাওয়া যাবে। আমার স্বামী ফিরে এসে মায়াকে জানালে সে রেগে আগুন হয়ে যায়। আর বলে তাহলে কিভাবে?? তান্ত্রিক বলো আর কি উপায় আছে ওই নীল পদ্ম পাওয়ার। আমার স্বামী বলেন যদি কালের অংশ ওই নাগের সাথে লড়াই করে নীল পদ্ম ছিনিয়ে আনতে পারে তাহলে তুমি ওই নীল পদ্মটা পেতে পারো। কিন্তু সেটা করতে হবে অমাবস্যার আগেই। নয়তো তোমাকে ওই শুভশক্তির ২১ বছর হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে। আর ওই নীল পদ্ম এই অমাবস্যার কালো আধার নামার সাথে সাথেই অদৃশ্য হয়ে যাবে আর ফুটবে ২০ বছর পর।
মায়াকে আমার স্বামী সাহায্য করার পরও সে তার কথা রাখেনি। সে আমার মেয়ের পরিবারের উপর থেকে ডাকিনীবিদ্যা জাদুর বান কাটে নি।। আমার মেয়ে যখন ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলো, তখন তার দেবর,ভাসুর আর জ্বা মিলে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে।। আমার ছেলে বাদি হয়ে কেইস করায় তারা আমার ছেলেটাকেও মেরে ফেলে।। আর এ সবকিছুর জন্য একমাত্র মায়া দ্বায়ী, তার জন্য আমি আমার মেয়েটাকে হারিয়েছি। আর আমার ছেলেটা অল্প বয়সে খুন হয়েছে বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো মহিলাটি।।
চোখ মুছে মহিলাটি আবারও বলা শুরু করলো ;
মায়া কালপুত্রকে সেই ঝিলে নিয়ে যায় কিন্তু কালপুত্র ছিলো ছোট তার এসবের বুঝ তখনও হয়নি। তাই মায়া সেই নীলপদ্ম আনতে ব্যর্থ হয়।
মায়া সেই শক্তির সন্ধান ঠিকই পেয়েছিল কিন্তু সে সঠিক সময়ে সেই শুভশক্তির বলি না দেওয়ায় কালের প্রকোপ পরে তার উপর।। কাল তার উপর অসন্তোষ্ট হয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।। কালের অভিসম্পাতে তার পুরো শরীর পাথরে রুপান্তরিত হয়।।
মায়ার পাথরে পরিনত হওয়া মুর্তিকে একটা বিশেষ বাক্সে রাখা হয়, আমার স্বামী বাক্সের উপর হিব্রু ভাষায় শক্তিশালী কয়েকটি মন্ত্র লিখে দেন। যাতে করে মায়া আর এই বাক্স থেকে কোনো ভাবে বেড় না হতে পারে। আর সেই বাক্সটি এতো বছর ধরে আমি গোপনে সংরক্ষণ করে আসছি।।
আদরের সন্তানদের হারিয়ে আমি আর আমার স্বামী তখন পাগল প্রায়।।
মারিয়ার অপঘাতে মৃত্যু হওয়ায় তার আত্মা একটা অভিশপ্ত আত্মা ছিলো।। মারিয়ার মুক্তি হয়নি সে প্রতিশোধের জন্য ইহকাল আর পরকালের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলো, তাই আমার মেয়েকে আমি প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করি। মারিয়া একে একে সবগুলো কে হত্যা করে যারা তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো, আর মারিয়ার আত্মা মুক্তি পায়।। কিন্তু.....
নিহান বললো কিন্তু কি??
মারিয়া বললো ; মা মনে করেছিলো আমার আত্মা মুক্তি পেয়েছে কিন্তু আমার আত্মা মুক্তি পায়নি! আমার মৃত্যুর সাথে আরও একজন জড়িত ছিলো যাকে শেষ না করা অব্দি আমার মুক্তি হতো না।।
নিহান বললো কে সে??
মহিলাটি বললো সে হলো আমার মেয়ে জামাই জায়ান।।
নিহান অবাক হয়ে বললো কিন্তু কেন? সে তো মারিয়া কে অনেক ভালোবাসতো তাহলে কেন?
মারিয়া বললো সে আমাকে কখনো ভালোবাসে নি সে শুধু ভালোবাসার অভিনয় করে গেছে। একে একে সবাই কে মারার পরও যখন আমার মুক্তি হয়নি, তখন আমি মার স্বপ্নে আবারও দেখা দেই মাকে সব বলি। মা ধ্যানে বসে জানতে পারেন আমার মৃত্যুর সাথে জায়ানও জড়িত ছিলো, কারণ সে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতো আর মা বাবার জোরাজুরিতে আমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছিলো।। আর আমার ভাই মাহিন কে জায়ান ই খুন করেছে।।
নিহান বললো ; জায়ান এখন কোথায়??
মারিয়া অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো আর বললো সে এখন তার উপযুক্ত যায়গায় আছে,, নরকে! বলে আবারও হাসতে লাগলো।।
মহিলাটি আবার বলা শুরু করলেন;
মারিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই জায়ান এক তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হয় আর তাবিজ ব্যবহার করে,বিধায় আমরা তার কোনো ক্ষতি করতে পারছিলাম না।।
আমার স্বামী তার আদরের ছেলে মেয়েকে হারিয়ে অসুস্থতায় দিন কাটাচ্ছিলেন। তাই মিরান কে একটা এতিমখানা থেকে দত্তক আনি সন্তান হারানোর কষ্ট ভুলার জন্য। কিন্তু সন্তানদের সুখে কিছুদিনের মধ্যেই আমার স্বামী পরলোক গমন করেন আমি হয়ে যাই একেবারে একা। মায়ার উপর রাগ আর ক্ষুভে তার সন্তান কে হত্যা করতে চাই, কিন্তু বাচ্চাটি ছিলো কালের অংশ তাই তাকে মারা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করি।।
আমার মেয়ের আত্মা কে আরও শক্তিশালী করতে আমি ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করা শুরু করি, কয়েক বছরের ব্যবধানে একজন পরিপূর্ণ ডাইনি হয়ে যাই।।
কালপুত্র জানতো আমি তার আসল মা নই, মায়াকে হারায় তখন তার বয়স ছিলো ৮ বছর। তাকে আর মিরান কে আমি এক সাথে বড় করি, তন্ত্রসাধনা থেকে দূরে রেখে স্বাভাবিক জীবন দেই। মিরান আর কালপুত্রকে পড়াশোনার জন্য বর্ডিং এ রেখে আসি। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে কালপুত্র জানান দেয় সেও তার মায়ের মতো ডাকিনীবিদ্যা অর্জন করেছে, আর মিরান কেও এর মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছে।।
নিহান বললো তাহলে মিরাকে কেন নিজের কাছে এতোদিন রেখেছেন, কি উদ্দেশ্য ছিলো আপনার??
মহিলাটি বললো ;
মায়া যখন মিরাকে বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে আসে, তখন আমি তাকে মায়ার অগোচরে চুরি করে সেখান থেকে নিয়ে আসি। আর মায়া পাথরে রুপান্তরিত হওয়ার পর তাকে একটা এতিমখানায় রেখে আসি। কিন্তু মায়া শুভশক্তির প্রতিক হওয়ায় তার উপর একের পর এক বিপদ ধেয়ে আসছিলো সে জন্য মিরার যখন ৫ বছর পূর্ণ হয় তখন তাকে নিয়ে আমি এই শহরে চলে আসি। আমি মিরাকে আমার নিজের মেয়ের মতো এতোদিন আগলে রেখেছিলাম। এই শহরে এসে একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করি। মিরাকে কালপুত্র আর মিরানের চোখের আড়াল করে রেখেছি।
এতো গুলো বছর কালপুত্রের চোখে ধুলো দিয়ে এসেছি সে কিছুই টের পায়নি।। কালের উদ্দেশ্যে বাচ্চা বলি দিয়ে মায়া কে আমি জাগিয়ে তুলবো এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তাকে কিন্তু এটা ছিলো একটা ধোকা। আমি কালপুত্র কে দিয়ে ওই ৯ টি বাচ্চা গায়েব করিয়েছি, সে কালের অংশ হওয়ায় তার মধ্যে অদৃশ্য হওয়ার এক ক্ষমতা আছে যা কাজে লাগিয়ে সে বাচ্চাগুলো কে অপহরণ করে নিয়ে এসেছিলো। তাকে দিয়ে আমি আমার কার্য সাধন করিয়েছি।। ওই ৯ টি বাচ্চা আমি কালের উদ্দেশ্যে বলি দিয়েছিলাম আমার মেয়ের আত্মা কে আরও শক্তিশালী করে তুলার জন্য।
নিহান বললো তান্নীকে কেন মেরেছো তার কি দুষ ছিলো??
মহিলা টি বললো, ৯ টি বাচ্চা বলি দিয়েও যখন মারিয়ার আত্মা দৃশ্যমান হচ্ছিলো না। তখন আমি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় জানতে পারি একটা কুমারী মেয়েকে বলি দিয়ে তার রক্তের আহুতি দিতে হবে।। আমি সেই অনুযায়ী মেয়ে খুজতে আমার লোক পাঠাই।। কিন্তু সেখানে তান্নীর জন্য সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়,, তাই উপায় না পেয়ে তান্নীর উপর ডাকিনীবিদ্যা জাদু করে তাকে আমার আস্তানায় নিয়ে আসি।
নিহান বললো আর জায়ান কে কিভাবে শেষ করলেন??
মায়া বললো ; জায়ান তাবিজ ব্যবহার করার কারণে আমি তার কোনো ক্ষতি করতে পারছিলাম না। জায়ান ততদিনে বিয়ে করে এক বাচ্চার বাপ হয়ে যায়। জায়ান আমার মৃত্যুর পর যে পাগলামির অভিনয় করেছিলো আমি তার এই অভিনয়কে বাস্তবে রুপ দিতে, মায়ের সাহায্যে তার বউয়ের উপর ডাকিনীবিদ্যা জাদু বান মারি আর তার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলি।। বাচ্চার সুখে তার বউও আত্মহত্যা করে, জায়ান এসব সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।। তার তাবিজটাও ততদিনে হারিয়ে ফেলে। মা তাকে খুঁজে বেড় করেন আর তাকে বলেন তার বউ কে ফিরে পেতে হলে একটা কুমারী মেয়েকে জোগাড় করে আনতে হবে। সে রাজি হয়ে যায়,কিন্তু তান্নীকে তার লোক নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়, তাই মা তান্নীকে বশ করে নিয়ে আসেন। কিন্তু জায়ান জানতো না সে তার নিজের মৃত্যুর দিকে নিজ ইচ্ছায় এগিয়ে এসেছে।।
নিহান বললো তান্নীকে কিভাবে নিয়ে এসেছিলে??
মারিয়া বললো মা তান্নীর উপর ডাকিনীবিদ্যা জাদু বান মেরেছিলেন।। যার ফলে তার হাত অচল হওয়ার যোগাড় হয়, আর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যেদিন রাতে সে উধাও হয় ওই দিন তার বাসায় আমি গিয়ে তাকে মানসিক ভাবে আরও ভয় দেখিয়েছি। তারপর তাকে ওই রাতেই তার রুম থেকে গায়েব করে নিয়ে আসি।
মহিলাটি বললো ; মারিয়ার কবর থেকে তার লাশ উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলাম আমি। লাশটি কফিনে রেখে তারপর জায়ানের রক্ত আগুন কুন্ডে আহুতি দিয়ে তান্নীকে বলি দেই। মারিয়ার আত্মা দৃশ্যমান হয়, জায়ান মনে করেছিলো তার স্ত্রী ফিরে এসেছে তাই সে এগিয়ে যায় কিন্তু মারিয়া কে ভয়ংকর রুপে দেখে সে ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে।। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়, মারিয়া তার শেষ শত্রুর রক্ত পান করে,, জায়ানের নিথর দেহ সেখানেই লুটিয়ে পড়ে।।
নিহান বললো আর আমার সাথে তুমি কেন এমনটা করেছিলে মারিয়া?? জায়ান কে মারার পরও তুমি কেন এই পৃথিবীতে থেকে গেছো তোমার তো মুক্তি হয়ে যাওয়ার কথা!!
মারিয়া বললো ; তুমি তান্নীর বিছানার নিচ থেকে একটা অভিশপ্ত পুতুল উদ্ধার করেছিলে।। ওই অভিশপ্ত পুতুলটার মধ্যে যে সুচগুলো বিধে ছিলো সেগুলোয় একেক টা বান মারা আর ওইটা তোমাকে বশে আনার জন্যই মা করেছিলো।। সুচ ফুটে যখন তোমার আঙুল থেকে রক্ত বেড় হলো সেটা অভিশপ্ত পুতুল শুষে নিয়েছিলো। তোমার সাথে এমন করার কারণ মিরার সাথে গত একমাসে যে ঘটনা গুলো ঘটছিলো তা মা করায় নি, কিন্তু কে করাচ্ছিলো তা আমরা জানতাম না।। তোমাকে সন্দেহ করেই মা তোমাকে বশে এনে জানতে চেয়েছিলো কেন মিরার সাথে এমন করছো। ইশার আজান শুনে যখন তুমি ছটফট করে উঠলে তখন আমি মনে করেছিলাম তুমি আমাদের বশে চলে এসেছো, তাই পুতুলটা নিয়ে আমি সেখান থেকে ফিরে আসি। আর পরবর্তীতে মিরার কন্ঠ নকল করে তোমাকে কল দিয়ে রাতে দেখা করতে বলি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো তোমাকে জঙ্গল অব্দি নিয়ে গিয়ে ভয় দেখানো, যাতে তোমার আসল উদ্দেশ্য আমরা জানতে পারি। তাই তোমাকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প শুনিয়ে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাই, কিন্তু আমাদের ভুল প্রমাণিত করে দিলে তুমি।। তোমার উপর আমাদের ডাকিনীবিদ্যা জাদু বান কাজ করেনি, তাই আমি মায়ের কাছে ফিরে আসি। কোনো সাধারণ মানুষ এতো বড় জাদুবিদ্যা থেকে বাঁচার কথা না কিন্তু তোমার উপর তার কোনো প্রভাবই পরে নি।
আর আমি যাইনি কারণ ; মিরার সাথে যে ঘটনা ঘটছিলো তারজন্য মা চিন্তিত ছিলেন। আমার মুক্তি হয়ে গেছে কিন্তু আমি থেকে গিয়েছি মিরাকে সাহায্য করার জন্য।
নিহান বললো প্রভাব পরে নি কারণ আমি আর ৪/৫ জনের মতো নই। আমার জন্মই হয়েছে শুভশক্তির রক্ষা করার জন্য।। আমার বাবা একজন জ্বিন আর মা ছিলেন তান্ত্রিক। আমার শরীর মানুষের মতো রক্ত মাংসের হলেও উত্তরাধিকার সূত্রে আমি জ্বিন জাতির একজন।।
আমার আরেকটি প্রশ্ন আছে মারিয়া তুমি আমাকে বলেছিলে মিরা কে নিতে সে সয়ং আসবে,, আর আমি কিছুই করতে পারবো নাহ,, কার কথা তুমি বলেছিলে??
মারিয়া বললো ; নিহান সেটা তুমি মিরার অতীত থেকেই জানতে পারবে।। তবে এতটুকু জেনে রেখো মিরাকে কাল যেমন হোক নিতে আসবে, তবে কেন সেটা তুমি সময় হলেই জানতে পারবে!!
মহিলা টি বললো ; নিহান খুব সাবধানে চলতে হবে তোমাকে, মিরাকে দেখে রেখো তার কিন্তু ২১ বছর হওয়ার আর বেশি দিন বাকি নেই। এতো দিন কাল পুত্রের থেকে মিরাকে আড়াল করে রেখেছি কিন্তু আর কতদিন এটা সম্ভব হবে জানি না।।
নিহান বললো আপনারা নিশ্চিত থাকুন আমি থাকতে মিরার কিছুই হতে দিবো না। কাল কেন সয়ং মৃত্যুদূত ও মিরাকে নিতে আসলে আগে আমার সাথে তাকে লড়াই করতে হবে।।
মারিয়া বললো, আমরা তাহলে নিশ্চিন্ত হলাম নিহান। আমার যাওয়ার সময় হয়েছে এখন, যদি আমাকে কখনো খুব প্রয়োজন হয় তিন বার চোখ বন্ধ করে আমার নাম নিও আমি হাজির হয়ে যাবো।
নিহান বললো অনেক ধন্যবাদ তোমাকে মারিয়া আর আপনাকেও কুমুদিনী মা, মিরাকে এতো বছর আগলে রাখার জন্য।
মারিয়া বললো, নিহান মিরাকে দেখে রেখো, আমার যেতে হবে আমি এখন আসি, বলেই মারিয়ার আত্মা ধিরে ধিরে অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো।
মারিয়ার চলে যাওয়াতে কুমুদিনী মা কান্না করে দিলেন।।
নিহান বললো, কিন্তু আমার মাথায় আরেকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে!!
কুমুদিনী চোখ মুছে বললেন ; কি সেটা?
- আপনি হঠাৎ করে বাসা থেকে উধাও হলেন কেন?
- কারণ এতো বছর কালপুত্রের চোখে ধুলা দিতে পারলেও তান্নীকে বলি দিয়ে আমি ভুল করেছি। মিরান জেনে গেছে আমি তান্নীকে তুলে এনেছি আর তার বলি দিয়েছি,, সে নিশ্চয়ই এতোক্ষণে কালপুত্র কে সব অবগত করেছে। তাই মিরার ভালোর জন্য আমি কিছু না বলেই চুপিসারে বাসা থেকে চলে এসেছি।।
- আচ্ছা ঠিক আছে কুমুদিনী মা আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।
- নিহান মিরার খেয়াল রেখো, আর ওকে একবার আমার কাছে নিয়ে এসো, ওকে আমি পেটে না ধরলেও বুকে ধরেছি। আমার মেয়েটা নিশ্চয়ই আমাকে না পেয়ে অস্থির হয়ে আছে।
- জ্বি অবশ্যই নিয়ে আসবো, এখন তাহলে আমি আসি।
এতোটুকু বলে নিহান থামলো।।
** এতক্ষণ মিরা নিহানের সব কথা মন দিয়ে শুনছিলো, কখন তার চোখে পানি চলে এসেছে সে বুঝতে পারেনি।। সে কান্নারত অবস্থায় নিহান কে বললো আমাকে মার কাছে নিয়ে চলো নিহান।
** নিহান মিরাকে নিয়ে একটা পুড়া বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রবেশ করে। বাসার ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার, মিরা নিহানের হাত চেপে ধরে রেখেছে। নিহান কুমুদিনীর কক্ষে প্রবেশ করতেই মিরা মা বলে চিতকার করে ওঠে।।
নিহান আর মিরা দৌড়ে গিয়ে কুমুদিনীর রক্তাক্ত দেহ ঝাপটে ধরে।
মিরা বলে;
মা তোমার কি হয়েছে মা! তোমার এই অবস্থা কে করেছে।
- নিহান বললো ; কুমুদিনী মা আপনার কি হয়েছে? কে করেছে আপনার সাথে এমন আমাকে বলুন!?
কুমুদিনী ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো ;
মিরা মা রে আমাকে ক্ষমা করে দিস, আমি অনেক খারাপ একজন মা। আমি অনেক জঘন্য কাজ করে এসেছি এতো বছর।
- না মা এভাবে বলো না। তুমি আমার ভালো মা।
- নিহান কালপুত্র জেনে গেছে আমি মিরাকে লুকিয়ে রেখেছি আর তার সাথে প্রতারণা করেছি। সে এসেছিলো এখানে আমাকে মেরে ফেলতে, আর মায়ার পাথরের মুর্তি হয়তো সে এতক্ষণে খুঁজে নিয়েছে। নিহান মিরাকে দেখে রেখো, মিরার সামনে অনেক বড় বিপদ। আমাকে যেতে হবে, আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে মিরা।
- তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমার, আমায় একা করে দিয়ে যেও না মা।
- নিহান বললো কুমুদিনী মা আপনার কিছু হবে না। আমি এখনই এম্বুলেন্স ডাকছি, আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
- না বাবা আমার হাতে আর বেশি সময় নেই।
* আর শোন মিরা তোর বাবা আর ভাই বেঁচে আছে ! তাদের খুঁজে বেড় কর.......
🔴 Steps to Get Link 🔗
1. Click on Ad ⬆
2. Wait for 5 seconds
3. Come Back Here
Ad Clicked! Please wait 5 seconds...
