ভূত ও পিশাচ কাহিনী ছোট গল্প রংধনুর চোখ শেষ পর্ব

আপনার লিংকটি তৈরী হচ্ছে

---------

 আপনার লিংকটি তৈরী হচ্ছে

ব্রিঃদ্রঃ গল্পটিতে কপিরাইট রয়েছে। (সংগ্রহিত)
⚠ #Warning : দুর্বল হৃদয়ের হলে পোষ্টটি Skip করতে পারেন।

গল্পঃরংধনুর চোখ
শেষ পর্ব 
জল্লাদ তলোয়ার উঠিয়ে এক মনে ইকরি'র দিকে তাকিয়ে আছে। রাজা হুকুম করা মাত্র-ই সে ইকরি'র মাথা টা ধর থেকে আলাদা করে ফেলবে।
পুরো রাজ দরবার নিস্তব্ধ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রাজার হুকুমের জন্য। 
অবশেষে রাজা তার ডান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে উঁচু করে আদেশ দিলো " এখন....
সাথে সাথে জল্লাদ তলোয়ার দিয়ে ধাপ করে ইকরি'র ধর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললো।
**আইদ ধড়ফড় করে উঠে বসলো। আইদের চোখে মুখে এক রাশ ভয় এবং আতংক। 
দেখা গেলো আইদ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। আইদের পিঠে ব্যান্ডেজ করা, হাতে স্যালাইন লাগানো। 
আইদ'কে জেগে উঠতে দেখে সালাম দৌড়ে এসে বললো " ওস্তাদ আপনি ঠিক আছেন তো। কি হয়েছে আপনাকে এমন লাগছে কেন...?
আইদ দুই হাত দিয়ে চেহারা মুছে বললো " সালাম আমি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। ইকরি কোথায় আছে জানতে পেরেছিস....?
সালাম বললো " হ্যাঁ উস্তাদ। ইকরি'কে জ্বীন রাজা নিয়ে গেছে। রাফসিয়া'র রূপ ধরে জ্বীন রাজা ছিলো সেটা। রাফসিয়া তো কবেই মারা গিয়েছে...! 
আইদ তাড়াতাড়ি করে নিজের হাতের স্যালাইনের পাইপ টান দিয়ে খুলে ফেললো এবং বললো " সালাম আমি বাসায় পৌঁছানোর আগে তুই গিয়ে জ্বীন রাজ্যে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখবি। কোনো ভুল যেনো না হয়.....!
সালাম আইদের কথামতো চোখের পলকে সেখান থেকে চলে গেলো। আইদ যেতে নিলে ডাক্তার এবং নার্স রা আইদ'কে বাঁধা দিচ্ছিলো। কারণ আইদ এখনো বিপদ মুক্ত না। আঘাতের জায়গায় আবার আঘাত পেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে....!
কিন্তু আইদ তাদেরকে বললো " আমি এখন না গেলে বেঁচে থেকেও মরে যাবো। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাকে যেতে হবে। প্লিজ আমাকে বাঁধা দিবেন না...!
আইদ এক প্রকার জোর করেই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলো। 
**এদিকে আমরা দেখতে পাই ইকরি'র মৃত্যু সত্যিই আইদের দুঃস্বপ্ন ছিলো। ইকরি এখনো জীবিত। তান্ত্রিক তার শিষ্যের সাথে ধ্যানে বসে উপায় খোঁজায় ব্যস্ত। ইকরি এবং হাকিম রা চিন্তিত চেহারায় বসে আছে। 
ইকরি বললো " হাকিম আইদের কোনো খবর পেয়েছো। সে কেমন আছে। ইমন শিকদারের কি হলো....?
হাকিম বললো " না। জ্বীন রাজ্য থেকে পৃথিবীর কারো সাথে যোগাযোগ করা যায় না সরাসরি। কিন্তু আমি কয়েকবার সালামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সালামকে শুধ এতটুকু জানাতে সক্ষম হয়েছি যে আমরা জ্বীন রাজ্যে আছি। তারপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি....!
হাবিবা বললো " তাহলে কি ইমন শিকদার আইদ এবং সালাম'কে হারিয়ে দিয়েছে...?
হাকিম এই প্রথম হাবিবা'র ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবা'র থুঁতনি চেপে ধরে বললো " খবরদার এটা বলবে না। আমার উস্তাদ হারতে শিখে নি। দেখবে সময় মতো এখানে এসে যাবে....!
ইকরি বললো " তাই যেনো হয় হাকিম। আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাই না। আমিও চাই আইদ তার চাঁদের পরী'কে ফিরে পাক। 
**এদিকে আইদ বাসায় এসে সরাসরি তন্ত্রমন্ত্রের কক্ষে প্রবেশ করলো। সালাম জ্বীন রাজ্যে যাওয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছে। কক্ষের মেঝে তে বড় একটা বালতি তে পানি পরিপূর্ণ করে রাখা। সেই পানিতে গোলাপের পাপড়ি ছিটানো।
সালাম বললো " উস্তাদ জ্বীন রাজ্যে যেতে হলে আপনাকে এই পানি তে ডুব দিতে হবে এবং যতক্ষণ না সেখানে পৌঁছে যান ততক্ষণ উঠা যাবে না এবং নিঃশ্বাস নেয়া যাবে না। যদি মাঝ পথে আপনি উঠে যান তাহলে আপনি মা*রা যাবেন নিঃসন্দেহে....।
আইদ বললো " যেভাবেই হোক আমাকে এটা করতে হবেই সালাম। জ্বীন রাজা ইকরি'কে মে*রে ফেলবে। আমি দ্বিতীয় বার চাঁদের পরী'কে হারাতে পারবো না.....!
আইদ গিয়ে বড় বালতির মাঝে নেমে পড়লো। সালাম একটা সুরমাদানি থেকে কিছু টা পানি তে মিশিয়ে দিলো। এরপর আইদ চোখ বন্ধ করে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে সেখানে ডুব দিলো। 
আইদ বুঝতে পারলো পানির স্রোত তাকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশ থেকে কিছু অদ্ভুত শব্দ কানে আসছে। আইদ চোখ না খুলে এক দমে অপেক্ষা করতে লাগলো। আইদের নিঃশ্বাস প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এখনো স্রোতের টানে কোথাও যেনো ছুটে চলেছে আইদ। আর থাকা যাচ্ছে না। এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। তখনই আইদ আঁচড়ে গিয়ে পড়লো একটা গাছের ছায়ায়।
আইদ কাশতে কাশতে দম নিতে লাগলো। আইদের আগেই সেখানে সালাম চলে এসেছে। সালাম এসে তাড়াতাড়ি তার মুখ থেকে গরম হাওয়া বের করে আইদ'কে উষ্ণ করে তুললো। 
আইদ স্বাভাবিক হয়ে বললো " আমরা কি চলে এসেছি সালাম..?
সালাম বললো " হ্যাঁ উস্তাদ। একটু সামনেই রাজপ্রাসাদ। চলেন তাড়াতাড়ি। আমাদের হাতে সময় নেই...!
**এদিকে আমরা দেখতে পাই তান্ত্রিক ধ্যানে বসে যেই রাস্তায়-ই যাচ্ছে উপায় খোঁজার জন্য সেই রাস্তায়-ই চাঁদের পরী'র কাঁটা মাথা পড়ে আছে। তার মানে চাঁদের পরী'র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তান্ত্রিকের জন্য রাজার বেঁধে দেওয়া সময় ফুরিয়ে আসছে। সত্যি সত্যি অন্য কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া গেলো না।
তান্ত্রিক ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো রাজ দরবারে। সেখানে সবাই উপস্থিত। ইকরি'রাও অপেক্ষা করে আছে তান্ত্রিকের খবরের জন্য। 
রাজাা সিংহাসনে সমাসীন। তান্ত্রিক মাথা নিচু করে রাজ দরবারে প্রবেশ করলো। রাজা গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো " তান্ত্রিক। বলো আমাদের....?
তান্ত্রিক ব্যর্থ কন্ঠে বললো " মাফ করবেন রাজা। আমি যেই রাস্তায়-ই গিয়েছি সেই রাস্তায়-ই চাঁদের পরী'র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো উপায় খুঁজে পাই নি....! 
রাজা হতাশ হয়ে ইকরি'র দিকে তাকালো। ইকরি'র শেষ আশাটাও নিঃশেষ হয়ে গেলো। এখন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই।
রাজা অনেক কষ্টে ঘোষনা দিলো " তাহলে তাই হবে এখন, আগে যা হয়েছিলো। চাঁদের পরী ফিরে আসার মাধ্যম এই মানব মেয়েকে বলি দেওয়া হবে।
তখন-ই সেখানে একটা কন্ঠ বলে উঠলো " আমি বেঁচে থাকতে এটা কখনও হতে দিবো না....!
সবাই চমকে গিয়ে তাকালো রাজপ্রাসাদের সদর দরজায়। ইকরি  মুখে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো " আইদ.......
প্রহরী'রা তীর তলোয়ার নিয়ে আইদের দিকে তাক করলো। আইদ বললো " মহামান্য রাজা। আমি আপনার সাথে এখানে দ্বন্দ্বে জড়াতে আসি নি। আর আমি একা আপনার এই বিশাল সৈন্য বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার মতো বোকাও নই। আমি এসেছি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে....!
জ্বীন রাজা হাত উঁচু করে বললো " সবাই নিজেদের হাতিয়ার নামিয়ে নাও। আর আইদ'কে আসতে দাও আমার কাছে...!
আইদ ধীরে ধীরে রাজার দিকে এগিয়ে গেলো। আইদের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের হয়ে জামা ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে আইদের কোনো খেয়াল নেই।
ইকরি আইদের দিকে এক আকাশ সমান আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। 
আইদ জ্বীন রাজার সামনে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ প্রদান করলো। জ্বীন রাজা বললো " বলো কি বলতে চাও। আমি শুনছি....!
আইদ বললো " আমি জানি আপনি যা করছেন তা আপনার জাতি'কে রক্ষা করার জন্য করছেন। কিন্তু আমি আপনাকে বলতে চাই, একটু আগে আমি ইমন শিকদার'কে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে এসেছি। আমার সামনে যদি এমন একশো ইমন শিকদারও আসে আমি তাদের সবাইকে শেষ করবো। চাঁদের পরী পুনর্জন্ম নেয়ার জন্য সম্পুর্ন প্রস্তুত। আপনি যদি আপনার জাতিকে বাঁচানোর জন্য ইকরি'কে মারতে চান তাহলে আমি ইকরি'কে বাঁচানোর জন্য আপনার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করছি এই মূহুর্তে। 
রাজা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে সিংহাসন থেকে উঠে গর্জন করে বললো " তুমি ভুলে যেও না কার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। আমি জ্বীন জাতির মাঝে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী কাজ্জাম জ্বীন-দের রাজা।
আইদও গর্জন করে বললো " আপনি যদি রাজা হোন তাহলে আমি চাঁদের পরী'র রক্ষক। আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা অব্ধি আপনার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো....!
রাজা ক্ষিপ্র হয়ে বললো " প্রহরীরা বন্দী করো এই মানব সন্তান'কে। রাজার সাথে বেয়াদবি করার জন্য তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। তবে তার আগে ঐ মেয়েকে বলি দিতে হবে...!..!
প্রহরীরা আইদ'কে বন্দী করতে আসলে আইদ তাদের ওপর নিজের পুরো শক্তি দিয়ে আক্রমণ করলো। সাথে সালাম এবং হাকিমও যোগ দিলো। মুহুর্তের মাঝে রাজ দরবারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলো। লড়াইয়ের মাঝে সাধারণ জ্বীনরা যে যার মতো ছুটে পালাতে লাগলো।
রাজা রাগে গড়গড় করতে করতে সিংহাসনে হাত দিয়ে চাপাচ্ছে আর আইদের দিকে হিংস্র পশুর মতো তাকিয়ে আছে।
আইদের সাথে সাধারণ প্রহরীরা কিছুতেই পেরে উঠছে না। আইদ এতো বছর সাধনা করে জ্বীনদের সাথে লড়াই করার যতো কৌশল শিখেছে তা দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। 
এক পর্যায়ে শক্তিশালী সৈন্যরা এগিয়ে আসতে চাইলে রাজা হাতের ইশারায় তাদেরকে থামিয়ে দিলো এবং নিজে উঠে গিয়ে আইদ'কে প্রচন্ড ভাবে আঘাত করতে লাগলো। আইদ রাজার সাথে কোনো ভাবেই পেরে উঠছে না। রাজা আইদ'কে মেরে আধমরা করে ফেললো। 
ইকরি চিৎকার করে বললো '' আর মারবেন না আইদ'কে। আপনি আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও আইদ'কে ছেড়ে দিন। দয়া করুন রাজা......!
রাজা নিজেকে শান্ত করে তারপর প্রহরীদের বললো " একে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখো। ঐ মেয়েকে এর সামনেই বলি দেয়া হবে। তারপর তাকেও মে*রে ফেলা হবে। সালাম এবং হাকিম'কেও আঁটকে ফেলা হলো...!
আইদ ঝাপসা চোখে দেখতে পাচ্ছে ইকরি'কে বলি দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টেনে হিঁচড়ে। আইদ বিড়বিড় করে বলছে " আমি কাউকে ছাড়বো না। ওকে ছেড়ে দাও। 
ইকরি চোখে পানি নিয়ে বলির স্থানে মাথা রাখলো। জল্লাদ তার তলোয়ার উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা গিয়ে সিংহাসনে বসলো। তারপর হুকুম দেয়ার জন্য ডান হাত উঁচু করলো। রাজার চেহারায় প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। 
আইদের দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। তার মানে জল্লাদ এখন ইকরি'র মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলবে।
রাজা হাত নামিয়ে বললো " এখন.....
জল্লাদ তার তলোয়ার নামালো ইকরি'র মাথা বরাবর। আইদ তার পুরো শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। হাকিম এবং সালাম নিজেদের চোখ বন্ধ করে ফেললো। তখন-ই একটা আগুনের তীর এসে জল্লাদের হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিলো।
সবাই হতবাক। রাজা প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো " কার এতো বড় সাহস। আমার হুকুমের বিরোধিতা করে....!
তখন-ই সবার চোখ গেলো রাজকুমারের মতো একটা ছেলে রাজকীয় ধনুক হাতে রাজ দরবারের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। ইকরি মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আইদ চোখ মেলে তাকালো। 
ছেলেটা তার চোখ খুলে রাজার দিকে তাকিয়ে বললো " আমার এতো বড় সাহস মহামান্য রাজা...!
ছেলেটার কপালে আরেকটা চোখ ভেসে উঠলো। 
রাজা অবাক হয়ে বললো " তিন চোখওয়ালা জ্বীন-দের রাজকুমার গালিব। তুমি এখানে কিভাবে। কেন....?
রাজকুমার গালিব তার ধনুক টা একজনের কাছে দিয়ে হাওয়ায় ভেসে রাজার কাছে এসে মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করলো।  
রাজা গালিবের মাথায় হাত দিয়ে বললো " তোমার বাবা মানে রাজা তাবরিজ কেমন আছেন...?
গালিব বললো " উনি পুরোপুরি ঠিক আছে। তবে আমার মনে হয় আপনি ঠিক নেই। আপনার কাজ্জাম রাজ্য ঠিকঠাক মতো চলছে না....!
রাজা একটু ধমক দিয়ে বললো " কি বলতে চাও তুমি। আর তোমার এখানে আসার কারণ কি....!
গালিব বললো " এখন-ই জানতে পারবেন। 
এই বলে কাউকে ডাক দিলো " ইন্নাত.... 
ভীরের মাঝখান থেকে একটা পাঁচ-ছয় বছরের ফুটফুটে মেয়ে বেড়িয়ে আসলো হাসি মুখে।
রাজকুমার গালিব তাকে কোলে নিয়ে বললো " এই হলো আমার মেয়ে ইন্নাত। আর ও একজন চাঁদের পরী....!
এটা শুনে রাজা সহ সবাই অনেক অবাক হয়ে গেলো। তার মানে জীবিত চাঁদের পরী। এটা কিভাবে হতে পারে....!
রাজকুমার গালিব বললো " আগে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন মহামান্য রাজা। ঐ ছেলেকে ছেড়ে দিন। আর চাঁদের পরী'র জন্য যেই মেয়েকে বলি দিতে যাচ্ছিলেন তাকেও ছেড়ে দিন। তারপর আমরা বসে কথা বলবো। মৃত্যু ছাড়াও অন্য উপায় আছে...!
রাজা রাজকুমার গালিবের কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে আইদ'কে ছেড়ে দিলো এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলো। ইকরি'কেও ছেড়ে দেয়া হলো।
তারপর মজলিসে সবাই একসাথে বসলো। 
রাজা জিজ্ঞেস করলো " এবার বলো রাজকুমার গালিব। তোমার নিজের মেয়েও একজন চাঁদের পরী হওয়া সত্বে কিভাবে তাকে রাজা তাবরিজ বাঁচিয়ে রাখলো....?
গালিব বলা শুরু করলো " আমিও একজন মানব মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম। যার নাম ছিলো আফরিন। আর এই কারণেই আমার সন্তান পায়ের তলায় চাঁদের চিহ্ন নিয়ে জন্ম নিয়েছে। আমার বাবা তার রাজ্যের অর্ধেক জ্বীন হারাতে প্রস্তুত ছিলো কিন্তু তার নাতনিকে মারতে প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু আমি সেটা হতে দিতে পারি না। নিজের সন্তানের জন্য আমার রাজ্যের অর্ধেক জ্বীন মারা যাবে এটা মানা যায় না। আমি দিন রাত ধ্যানে বসে রইলাম উপায় খুঁজে বের করার জন্য। কোনোভাবেই মৃত্যু ছাড়া অন্য উপায় পাচ্ছিলাম না। 
অবশেষে অনেক তপস্যার পর আমার তৃতীয় চোখে ধরা দিলো একটা উপায়। যে উপায়ে চাঁদের পরী'র মৃত্যু ছাড়াও অর্ধেক জ্বীন জাতি বাঁচানো সম্ভব....! 
এটা শুনে রাজা সহ সবাই কৌতুহল নিয়ে গালিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। গালিব তার মেয়ে ইন্নাতে'র কপালে চুমু খেয়ে বললো " সেই উপায় টা হলো চাঁদের পরী'কে আগুনের কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে পার হতে হবে। যদি তার মন পরিষ্কার থাকে। তাহলে সে কুন্ডলী পার হয়ে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসবে। এতে করে সে তার মাঝে থাকা সকল অলৌকিক শক্তি হারিয়ে ফেলবে। সম্পুর্ন রূপে একজন মানুষ হয়ে যাবে। তার জন্য কোনো জ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। 
আর যদি তার মন পরিষ্কার না থাকে। সে যদি তার শক্তি হারাতে না চায়। সে যদি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করে তাহলে সে ঐ আগুনের পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে। 
এবার আইদ বললো " তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো আমার চাঁদের পরী'র মন পরিষ্কার কি না...?
গালিব বললো " এট বুঝার কোনো উপায় নেই। সম্পুর্ন তার মনের ওপর নির্ভর করবে। এখন তুমি যদি চাও তাহলে আমি নিজে তোমার চাঁদের পরী'কে এই মেয়ের মাঝে ফিরিয়ে আনবো৷ তারপর এই উপায়ে তাকে বাঁচাতেও পারো আবার মারতেও পারো। এটাই একমাত্র উপায়...!
রাজা বললো " তুমি এতোটা নিশ্চিত কিভাবে রাজকুমার গালিব...? 
গালিব বললো " কারণ ইন্নাতের যখন চার বছর বয়স তখন প্রথম চন্দ্রগ্রহণ ছিলো ওর জীবনের। সবাই ভয়ে ছিলো এই বুঝি তিন চোখওয়ালা জ্বীন রাজ্য থেকে অর্ধেক জ্বীন মারা যাবে। কিন্তু আমি এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেদিন ইন্নাত'কেও বাঁচিয়ে নিয়েছি। আমার রাজ্যকেও বাঁচিয়ে নিয়েছি। 
আইদ বললো " আমি এটা করতে রাজি আছি। এখন এটা ছাড়া আর কোনো অপশন নেই। ইকরি তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে...!
ইকরি বললো " এমনিতেও আমি এটা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমি জানি আপনার মন সব সময় চাঁদের পরী'র জন্য অস্থির থাকে। আমার জন্য আপনার মনে কোনো ফলিংস নেই। তবুও আমি আপনার সাথে না থাকতে পারি অন্তত আমার শরীর টা তো থাকবে। এতেই আমি খুশি.....!
পাশ থেকে সালাম হাকিমের কানের কাছে গিয়ে বললো " লায়লা মজনু কাঁদিয়ে ছাড়বে ভাই। টিসু পেপার আছে নাকি তোর কাছে...!
হাকিম একটু চোখ বড় করে তাকালো সালামের দিকে।
**গালিব রাজার অনুমতি নিয়ে তার কাজ শুরু করলো। রাজা গিয়ে আগনের কুন্ডলী প্রস্তুতির কাজ প্রহরীদের বুঝিয়ে দিচ্ছে।
ফ্লোরের মাঝে ইকরি'কে শুইয়ে দিলো গালিব। আইদ ইকরি'র হাত শক্ত করে ধরে আছে। 
গালিব বললো " চাঁদের পরী যখন ইকরি'র শরীরে প্রবেশ করবে তখন ইকরি'র আত্মা তার শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। তখন তুমি ওর হাত ভুলেও ছাড়বে না আইদ। কারণ তোমার স্পর্শ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ইকরি'র মাঝ থেকে দুইজনের আত্মা-ই বেরিয়ে যাবে। 
আইদ বললো " আপনি চিন্তা করবেন না রাজকুমার গালিব। আমি মরে গেলেও ইকরি'র হাত ছাড়বো না...!
গালিব তার কাজ শুরু করে দিলো। রংধনুর সাত রং ছিটিয়ে দিলো ইকরি'র ওপর। এক ধরনের নীল রঙের পানি একটা পাতার ওপর নিয়ে ইকরি'কে পান করিয়ে দিতেই ইকরি চলে গেলো অন্য এক জগতে। এখানে আশেপাশে শুধু রঙ বেরঙের মেঘের মতো ধোঁয়া উড়ছে। এটাই তাহলে রংধনুর দুনিয়া।
ইকরি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ কাঁধে হাত রাখতেই ইকরি চমকে গিয়ে তাকিয়ে দেখলো পরীর মতো সচ্চ এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে।
মেয়েটা বললো " তোমাকে আইদ পাঠিয়েছে তাই না...?
ইকরি বললো " তুমি-ই তাহলে চাঁদের পরী কথা...?
কথা মাথা নাড়িয়ে হ্যঁ সূচক জবাব দিয়ে ধীরে ধীরে ধোঁয়ার মতো হয়ে ইকরি'র শরীরে মিশে যেতে লাগলো। 
এদিকে বাস্তব দুনিয়ায় ইকরি ছটফট করা শুরু করলো। আইদ যেনো ইকরি'র হাত ধরেই রাখতে পারছে না। এক পর্যায়ে ইকরি'র মুখ থেকে সুন্দর একটা প্রজাপতি বের হলো।
গালিব বললো " ভালো থেকো ইকরি...?
প্রজাপতি টা উড়ে উড়ে চলে গেলো এক অজানা গন্তব্যের দিকে। 
ইকরি এখনো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আইদ বললো " ইকরি চোখ খুলছে না কেন..? 
গালিব বললো '' একটু দাঁড়াও। এখন-ই ফিরে আসবে।
বলতে না বলতেই ইকরি চোখ খুকে তাকালো। আইদ খুশি হয়ে বললো " কথা.....
ইকরি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। 
তার মানে ইকরি'র মাঝে এখন কথা চলে এসেছে। গালিব বললো " তাড়াতাড়ি আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আইদ তুমি কথা'কে সব কিছু বুঝিয়ে আগুনের কুন্ডলীর কাছে নিয়ে আসো। 
আইদ কথা'কে সবকিছু বুঝিয়ে বললো। কথা রাজি হয়ে গেলে এবং বললো " আমার এসব শক্তির দরকার নেই। আমি তো শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।
আইদও অনেক খুশি হয়ে গেলো।
রাজা আগুনের কুন্ডলী সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আইদ কথা'কে নিয়ে সেখানে আসলে রাজা বললো " এখন তোমার চুড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার সময়। 
কথা বললো " হ্যাঁ। আপনি তো দাঁড়িয়েই আছেন আমাকে আবার মারার জন্য। 
রাজা একটু হেসে বললো " রাজকুমার গালিব না আসলে এবারও তাই হতো। এখন যা করা দরকার তাই করো। দোয়া করি বেঁচে ফিরো...!
কথা আইদ'কে বিদায় জানিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে হালকা মুচকি হেসে ধীর পায়ে আগুনের কুন্ডলীতে প্রবেশ করলো। কথা চিৎকার করে উঠলো। আইদ ভয় পেয়ে বললো " রাজকুমার গালিব এটা কি হচ্ছে। কথা কি ঠিক আছে...!
গালিব বললো " একটু অপেক্ষা করো বয়। দেখো কি হয়...!
প্রায় অনেকক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু কথা আগুনের কুন্ডলী থেকে বের হলো না। 
সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ। তাহলে কি কথা'র মন পরিষ্কার ছিলো না।
আইদ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। তখন-ই সবাইকে চমকে দিয়ে বের হয়ে এলো কথা একজন সাধারণ মানুষের বেশে।
সবার মুখে হাসি ফুটলো। আইদ দৌড়ে গিয়ে কথা'কে জড়িয়ে ধরলো।
সালাম বললো " এই সবাই চোখ বন্ধ কর। এসব বাচ্চাদের জন্য না...!
হাকিম বললো " এখানে তুই ছাড়া বাকি সবাই বড়....!
জ্বীন রাজা রাজকুমার গালিবকে জড়িয়ে ধরে বললো " অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। এতো শত বছরের মৃত্যুর নিয়ম তুমি আজ বদলে দিলে। সত্যি-ই তুমি ভবিষ্যত তিন চোখওয়ালা জ্বীন-দের যোগ্য রাজা।
গালিব তার মেয়ে ইন্নাত'কে কোলে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। 
আইদ দৌড়ে এসে গালিবের হাতে চুমু খেয়ে বললো " আমি চিরজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো...!
গালিব একটু হেসে আইদের কানের কাছে গিয়ে বললো " তোমার কাছে খুচরো ৫০ টাকা হবে। যাওয়ার ভাড়া নেই আমার কাছে...!
আইদ হেসে বললো " আপনি তো আমার মতোই ভাই...!
গালিব ভ্রু কুঁচকে তাকালে আইদ জিহবায় কামড় দিয়ে বললো " সরি সরি আমি আপনার মতো...!
গালিব এক গাল হেসে বললো " তাহলে ভালো থেকো তোমরা। আমার যাওয়ার সময় হয়েছে...!
আইদ ইন্নাতে'র গাল টেনে জিজ্ঞেস করলো " মাই লিটল চাঁদের পরী। তোমার কি লাগবে বলো...?
ইন্নাত তোতলানো কন্ঠে বললো '' আমাল একতা মা লাগবে....!
গালিব বললো " মামণি এসব বলে না। তাহলে আমরা এখন যেতে পারি...!
গালিব চলে যাচ্ছে। আইদ পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো " রাজকুমার গালিব। ইন্নাতের মা কোথায় এখন...?
গালিব কিছু না বলে আকাশের দিকে ইশারা করলো। আমরা বুঝতে পারি আফরিন আর বেঁচে নেই।
রাজকুমার গালিব ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো তার চাঁদের পরী'কে নিয়ে।
**১০ দিন পর..........
আইদ এবং কথা বিয়ে করে নিয়েছে। আজ তাদের বাসর রাত। আইদ ঘরে ঢুকে দেখলো কথা লম্বা ঘোমটা টেনে খাটে বসে আছে। 
আইদ আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন-ই থেমে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো " সালাম বের হয়ে আয়। না হলে কিন্তু.... 
সালাম বত্রিশটা দাঁত বের করে খাটের তলা থেকে বের হয়ে এলো।
আইদ বললো " তুই বের হইবি নাকি আমার পা ইউজ করবো...!
সালাম বললো " পা কিন্তু আমারও আছে উস্তাদ...!
আইদ চোখ বড় করে তাকালে সালাম বললো " সেগুলো দিয়ে আমি হেঁটে হেঁটে বের হয়ে যাবো এখন...!
এই বলে সালাম বের হয়ে গেলো। বাইরে গিয়ে দেখলো হাকিম আর হাবিবা বাগানের দোলনায় বসে গল্প করছে। সালাম নাক ছিটকে বললো " ঢং দেখে বাঁচি না। এসব লটর পটর করা আমার কাছে একদম বিরক্ত লাগে। মাইয়া মানুষ আমার দুই চোক্ষের বিষ।
 হাকিম ডাক দিয়ে বললো " ঐ বিষ খেয়ে তুই মরে যা। 
সালাম বললো " তুই মর হা*লা। আমি দেশের সম্পদ। আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। 
**আইদ হাফ ছেড়ে খাটের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই কথা ঝটপট খাট থেকে নেমে আইদ'কে পা ছুয়ে সালাম করলো।
আইদ খুশির ঠেলায় বলে বলে ফেললো " বেঁচে থাকো মা বেঁচে থাকো...!
বলেই জিহবায় কামড় দিয়ে বললো " হায় আল্লাহ এইটা কি বললাম আমি...!
কথা ঘোমটা টান দিয়ে নামিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে আইদের দিকে তাকিয়ে বললো " কি বললি তুই...?
আইদ বললো " সরি সরি ভুলে গালতি হু গেয়া। 
কথা আইদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো। অবশেষে কথা আইদ'কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। 
আইদ বললো " তুমি আমার চোখের পানি হয়ে যাও। আমি তোমাকে হারানোর ভয়ে কখনও কাঁদবো না...!
কথা বললো " হয়ে গেলাম আমার প্রিয় রক্ষক.....!
**এদিকে আমরা দেখতে পাই ফারদিন চৌধুরী হাঁটু গেড়ে বসে আছে একটা কালো ছায়ার সামনে। ছায়াটার মাথায় বড় বড় দুইটা শিং। 
ছায়াটা বলে উঠলো " আমি তোমাকে ইমন শিকদারের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী করে দিবো। তোমার লক্ষ্য একটাই হবে। কথা'র মাঝে তোমার চাঁদের পরী'কে ফিরিয়ে এনে কাজ্জাম জ্বীন-দের অর্ধেক মেরে ফেলা। 
ফারদিন চৌধুরী মাথা উঠিয়ে রহস্যময় এক হাসি দিয়ে বললো " আমি এটা করবো.........!
************সমাপ্ত *************
Galib Abraar

🔴 Steps to Get Link 🔗

Click Ad

1. Click on Ad ⬆
2. Wait for 5 seconds
3. Come Back Here

Ad Clicked! Please wait 5 seconds...


--------