ভূত ও পিশাচ কাহিনী ছোট গল্প অস্পষ্ট_আয়না (৪র্থ পর্ব)

আপনার লিংকটি তৈরী হচ্ছে

---------
ব্রিঃদ্রঃ গল্পটিতে কপিরাইট রয়েছে। (সংগ্রহিত)
⚠ #Warning : দুর্বল হৃদয়ের হলে পোষ্টটি Skip করতে পারেন।
গল্পঃঅস্পষ্ট_আয়না
(৪র্থ পর্ব)
 Md. Nazmul 
মিতুর কান্না জড়িত ভয়েসে আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম।বাবা নাকি প্রচুর অসুস্থ।মিতু ফোন দিয়ে বললো।ভোর রাত্রে বাবাকে মেডিকেলে ভর্তি করেছে।
তনয়কে বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম,কিন্তু উঠলো না।এক পর্যায়ে তনয়কে ধাক্কা দিলাম, সেই ধাক্কায়  তনয়ের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, ঘুমটা ভেঙে যাওয়ার পরে আমার দিকে অগ্নিমূর্তি ভাবে তাকিয়ে পরলো। আমাকে থাপ্পড় দিতে গিয়েও ওর হাতটা সরিয়ে নিল।
আমি কান্না জড়িত কন্ঠে তনয়কে বললাম....

- তনয় আমার বাবা অনেক অসুস্থ। সে এখন মেডিকেলে ভর্তি আছে। আমি এখন বাবার কাছে যাবো।তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও, আমার সাথে যাবে।
- আমার অফিসের তো জরুরী কাজ আছে আমি যেতে পারব না। বরং তুমি যাও আমি পারলে অফিসের কাজ শেষ করে তারপরে রাতে রওনা দিব।
-তনয় অফিসের কাজটা তো পরেও করা যাবে তাই না? এমন তো খুব জরুরী কাজ নয় যে তোমার এখনই করতে হবে। আমার বাবা এখন অসুস্থ এই মুহূর্তে তুমি যদি না যাও তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়? আর আমি একটা মেয়ে আমি একা কিভাবে যাব? আমার কাছে মিতু থাকতো আমি আর মিতু চলে যেতাম। কিন্তু আমি তো একা যেতে সাহস পাচ্ছি না প্লিজ তুমি আমার সাথে চলো আমার বাবা অনেক অসুস্থ তুমি কেন বুঝতেছোনা।

- লামিয়া এই মুহূর্তে আমার সম্ভব না। আমি তো বললাম যে আমার অফিসের জরুরী একটা কাজ আছে। তুমি কেন বুঝনা তুমি বরং একাই যাও নইলে আমি ড্রাইভার কে বলে দিব ও তোমাকে নিয়ে যাবে।

- ঠিক আছে তবে আমি একাই যাচ্ছি। তুমি কাজ শেষ করে পারলে তুমিও চলে আসো।

সকালের নাস্তাটা আর করা হলো না। আমি ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে রওনা হলাম। আমার এখান থেকে যেতে প্রায় ছয় ঘন্টার মত সময় লাগবে। ড্রাইভারকে বললাম যত দ্রুত পারে সে যেনো আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যায়।

মাঝপথে যখন গেলাম তখন মিতু আমাকে আবার ফোন দিলো। মিতুর ফোনটা দেখে আমার বুকের মাঝে ধড়পড় করতে লাগল। আমার হার্টবিট প্রচুর পরিমাণে কাঁপছে। আমি কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করার পরে..

- আপু তুই কতদূর? বাবা আরও অসুস্থ তুই একটু প্লিজ তাড়াতাড়ি আয়।

- এইতো বোন আসছি আরেকটু অপেক্ষা কর। আমি মাঝ পথ পেড়িয়ে চলে এসেছি। আমার আর বেশি একটা সময় লাগবে না তুই বাবার কাছে থাক। কি হয় আমাকে প্লিজ জানাস।আর চিন্তা করিস না।

- হসপিটালে গিয়ে দেখলাম আমার বাবা আইসিউতে ভর্তি। ডক্টর ওষুধের এবং তার চিকিৎসার টাকার একটা লিস্ট দিলো। টোটাল সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো দরকার।এখন আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। আমার হাতেও এখন তেমন কোনো টাকা নেই। আর আমার বাবার যে আর্থিক অবস্থা জমি বিক্রি করলেও তো এত টাকার অর্ধেক আমরা মিলাতে পারব না। আমি কোন দিশা না পেয়ে আমি তনয়কে ফোন দিলাম।

- তনয় আমার বাবা প্রচুর অসুস্থ তুমি প্লিজ একটু আসো। আমি তোমার দুটো পায়ে ধরছি। প্লিজ তনয় তুমি আসো। আর আমার বাবার চিকিৎসার জন্য তিন লাখ টাকা লাগবে, আমি এখন টাকাগুলো কই পাবো জানিনা। তুমি কি আমাকে টাকা দিবে। আমার বাবাকে দেখার মতো তার কেউ নেই।আমরা দুইটা বোন আমার তো কোন ভাই নেই। এখন আমি টাকা গুলো কিভাবে ম্যানেজ করবো?   যদি বাবার চিকিৎসা না করাতে পারি তাহলে বাবাকে আমরা বাঁচাতে পারবো না। আমরা দুইটা বোন এতিম হয়ে যাব।
- আচ্ছা লামিয়া আমি দেখতেছি আমি তোমাকে কিছুক্ষণ পরে ফোন দিচ্ছি।

ফোনটা কেটে দিয়ে আমি তনয়ের অপেক্ষায় আছি।যদি আমাকে টাকাটা দেয় তাহলে আমি আমার বাবার চিকিৎসা করাতে পারবো। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেল।সময় যেনো পার হচ্ছে না। তারপরও তনয়কে  ফোন দেই আমি।আবারও বেহায়ার মত তনয়ের কাছে ফোন দিলাম।রিসিভ করে...

- লামিয়া আমি চট্টগ্রামে আসতেছি। ঢাকা থেকে আমি রওনা দিয়েছি।আর তুমি বাবার চিকিৎসা করো।টাকা যা লাগে আমি দিবো।

তনয়ের ভরসাতে যখন ডাক্তার কে বললাম যে আপনারা চিকিৎসা চালিয়ে যান টাকা দেওয়া যাবে। তখন ডক্টর জানালো বাবার চিকিৎসার টাকা নাকি অলরেডি পেইড করে ফেলছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম এটুকু সময়ের মধ্যে কে টাকা পেইড করলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম তাকে এই টাকাটা কে দিয়েছে? কে হসপিটালে  এসে টাকা পেইড করেছে।বলল চেনে না।পরিচয় দেয় নি।

তনয় টাকাটা দিল না তো? আর তনয় এখানে কিভাবে টাকাটা পেইড করবে? আমার মাথায় কোন কিছুই কাজ করছে না। আর আমি তো এই ব্যাপারটা তনয়কে ছাড়া কাউকে  জানাইনি। আর আমার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে হয়তো কেউ জানেনা যে বাবা এতটা অসুস্থ। সবই আমার এখন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আইসিইউর রুমের দরজার সামনে আমি বসে আছি।ডাক্তারের অপেক্ষা করছি ডাক্তার কখন বের হবে?কখন জানাবে বাবার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বের হয়ে আমাকে বলল...

- দেখুন আমাদের সাধ্যমত আমরা চিকিৎসা করে যাচ্ছি। এখন আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন। আমরা এখনো কিছু বলতে পারছি না। আমাদের আরেকটু সময় নেওয়া দরকার। আপনারা চিন্তা করবেন না। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন আপনার বাবা যেনো সুস্থ হয়ে যায়।

গতকাল ভোররাতে আমার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে। আর ব্রেইন স্ট্রোক করার পর থেকে বাবার কোন হুশ জ্ঞান নেই। আমি মিতুর কাছে জিজ্ঞেস করলাম যে বাবার এমন অবস্থা হওয়ার কারণ কি। মিতু আমাকে কিছুই বলতে পারছে না।শুধু কেঁদে যাচ্ছে। আমি আর মিতুর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।আগে বাবা সুস্থ হোক তারপরে সবকিছু জানা যাবে।
রাতে রাত সাড়ে দশটার দিকে তনয় আমাদের কাছে আসলো। তনয় আমাকে এসে সান্ত্বনা দিতে লাগল। আমি তনয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলাম যে মেডিকেলে তনয় কোন টাকা দিয়েছে নাকি। তনয় আমাকে জানিয়ে দিল যে না। সে কোন টাকা দেয়নি। জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে।আমি তনয়কে আর কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। তাহলে এই টাকাটা কে দিল??

আমি আর তনয় রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছি। মিতু বাবার কাছে আছে। আমার ফোনে আরও একটি মেসেজ আসে। আমি ম্যাসেজ টি ওপেন করি।ওপেন করে পড়তে থাকি..
"তোর বাবার টাকাটা আমি দিয়েছি। তুই কোথায় যাস কি করিস তোর সব খোজ-খবর আমার জানা আছে। আমি সব কিছুই জানি। আমি কে তুই সময় হলে জানতে পারবি। তোর বাবাকে টাকাটা দেওয়ার কারণ কি জানিস না! থাক এখন আমি কিছু বলবো না। তবে এটা ভাবিস না যে তুই আমার হাত থেকে রেহাই পাবি। অনেক ভোগান্তি আছে। সময় হলে বুঝতে পারবি। আর হ্যাঁ তুই যদি আমার এই মেসেজগুলো কাউকে দেখাস তাহলে তোর পরিবারের কাউকে না কাউকে হারাতে বসবি। তোর বাবার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। তোর বাবা আমাকে চিনেও না। আমি তোদের প্রতি করুণা করে টাকাগুলো দিয়েছি। তাই ভেবে নিস না যে তুই আমার হাত থেকে রক্ষা পাবি। তুই হয়তো ভাবছিস যে আমি কে? আমি কেন এই কথাগুলো কেন বলছি তুই বুঝতে পারছিস না? তোর উপর আমার কিসের  শত্রুতা?আছে আছে ঝামেলা তো পাকিয়ে রাখছিস।সময় হলেই তুই বুঝতে পারবি শুধু সময়ের অপেক্ষা।"

খাবার খেতে খেতে মেসেজটা পড়লাম।আমার গলা থেকে আর খাবার নামছে না। আমি তনয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তনয় মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। আমি খাবার না খেয়ে উঠে পরলাম। তনয় জানতে চাইলো, কি হয়েছে? আমি তনয়কে বললাম যে খেতে ইচ্ছে করছে না।হসপিটালে যাব।

দুদিন পরে তনয় ঢাকায় চলে গেল। বাবার অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। আমি এখনো হসপিটালে আছি বাবার কাছে। বাবার শরীরের উন্নতি দেখে তাকে বাসায় নিয়ে গেলাম।বাসায় নিয়েই তার ট্রিটমেন্ট করব।

সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেল কিন্তু তনয় আমাকে ওর নিজের ইচ্ছাতে একটাবারও ফোন দেয়নি। আমি তনয়কে ফোন দিতাম দুই এক মিনিট কথা বলার পরে ফোন কেটে দিতো। আমি আর তনয়কে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতাম না।তবে আমায় প্রচুর ভাবায়! বাবার চিকিৎসার কথা শুনে তনয় টাকাটা দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যাবে, আমি কখনো ভাবতে পারিনি।কারণ তনয় আমাকে উপর থেকে ভালোবাসা দেখালেও আমি তনয়ের ভিতরে জায়গা করে নিতে পারিনি।যদি জায়গা করে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো না আমাকে কষ্ট দিত না।
সন্ধ্যার দিকে তনয় আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। আমি ফোনের কাছে ছিলাম না। তাই ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি। আমি ওর কল গুলো দেখে তনয়কে ফোন দিলাম। ফোনটা রিসিভ করে আমাকে কয়েকটা গালি দিল। যে গালিগুলো শুনার আশা মোটেই করেনি। আমি চুপচাপ ভাবে তনয়ের গালিগুলো শুনলাম।তনয় আমাকে বলল...
- নীলাকে  সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। নীলার ফোনটা অফ।নীলা তো কখনো না বলে বাসা থেকে বের হয়না। আর বাসা থেকে বের হলেও দুই এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসে। আমাদের প্রচুর টেনশন হচ্ছে। নীলা তোকে কিছু বলেছে।তুই জানিস কিছু?
(চলবে............)

🔴 Steps to Get Link 🔗

Click Ad

1. Click on Ad ⬆
2. Wait for 5 seconds
3. Come Back Here

Ad Clicked! Please wait 5 seconds...


--------