ব্রিঃদ্রঃ গল্পটিতে কপিরাইট রয়েছে। (সংগ্রহিত)
গল্পঃঅস্পষ্ট_আয়না(২য় পর্ব)
Md. Nazmul
মিতু নাকি নীলার নেকলেস চুরি করেছে।
কথাটি তনয় আমাকে ঠান্ডা মাথায় বললেও আমার বিশ্বাস হয়নি। তনয়ের বাসার সবাই মিতুকে সন্দেহ করছে।কারন আমরা গরীব পরিবারের সন্তান।আমার দৃঢ় বিশ্বাস মিতু এমন কাজ করতেই পারে না।আমরা এমন শিক্ষা পাইনি পরিবার থেকে।বাবার যতটুকু ছিলো না নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম।
কিন্তু এখন কি এমন অপবাদ দিচ্ছে মিতুর নামে?
গতকাল রাতে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে মিতু যেই ওর চাওয়াটা আমার কাছে বলতে যাবে তখনই তনয় আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলো।তখনও মিতু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
তনয় আমাকে ডাক দেওয়ার কারনেই ওর চাওয়াটা শুনতে পারলাম না।তনয় আমাকে ডাক দিয়েই বললো রাতের খাবার খেয়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।কি একটা নাকি ঝামেলা হয়েছে।
আমিও আর তনয়ের সাথে কথা বাড়াতে যাইনি।কারন আমার নিজেরই ভালো লাগছে না।তনয় একটা বেঈমান।ও আমার সাথে তো বেঈমানী করতেছে,সেই সাথে আমার বোন মিতুকেও ঠকাচ্ছে।
তনয়কে ঘৃনা করলেও আমি তা প্রকাশ করতে পারছি না।খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার তনয়ের সাথে কথা বলে যেতে হচ্ছে।সব কিছু বুঝে শুনেও আমি এখনো চুপচাপ আছি।কারন আমরা মেয়েরা চাইলেই সব কিছু করতে পারি না।সমাজ আমাদের মেনে নেয় না।সমাজ আমাদের লাঞ্চিত বঞ্চিত করে।আমাদের টেনে নিয়ে আসে নর্দমার মাঝে।সমাজে মাথা নিচু করে চলতে হয় আমাদের।কারন আমরা আভিজাত্য পরিবারের সন্তান নয়।
রাত সাড়ে দশটার দিকে তনয় আমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। লং ড্রাইভে যেতে হবে। তনয় সাথে মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলছে কিন্তু আমি চুপচাপ ভাবেই তনয়ের পাশে বসে আছি। কোন কথাই আমার মুখ থেকে বের হবে না, কারণ তনয়ের প্রতি আমার কেমন যেন একটা ঘৃণা জন্মেছে, তনয়ের উপর আমার যে একটা আস্থা ছিল সেই আস্থাটা আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। কারন আমি নিজ চোখে দেখেছি আবার আমার বোনের হাত ধরে গল্প করছে। এছাড়াও তনয়ের আপন বোন আমাকে যেটা বলেছে সেটা শোনার পরে আর তনয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা টা কিভাবে থাকে? আমি যখন বিয়ে করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এই মানুষটি হয়তো আমাকে সারাজীবন ভালবাসবে। ভালো না বাসুক অন্তত আমাকে একটু সম্মান করলেও করবে। কারণ তনয় নিজের ইচ্ছাতেই একটা গরীব ফ্যামিলির মেয়েকে বিয়ে করেছে। মানে আমার বাবার কোন টাকা পয়সা নেই আমাদের আর্থিক অবস্থা জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করেছে। আমাকে বিয়ে করার সময় তনয়ের কোনো চাহিদা ছিল না। আমার বাবা তনয়ের হাতে একেবারে শূন্য হাতে তুলে দিয়েছে। আর তনয়'ও আমাকে শূন্য হাতে গ্রহণ করেছে। কোনো অভিযোগ ছিলো না মানুষটির মাঝে।তবে বিয়ের পরে তনয়ের মেজাজটা আমি দেখতে পাই। তনয়ের যে কারো উপরে রাগ বেড়ে যায়, আবার হঠাৎ করে তা কমে যায়। কিন্তু ইদানিং তনয় কি শুরু করছে?তনয় আমাকে নিয়ে তো খেলছে সেই সাথে আমার বোনের জীবনটাও নষ্ট করে দিচ্ছে। আমি জানিনা কোন কারনে বা কোন ভুলের কারণে এমনটা করতেছে। কিন্তু তনয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল। আমিতো তনয়কে খুব সহজেই গ্রহণ করে নিয়েছি।
ভাবতে ভাবতে কখন যে আমার চোখ লেগে আসছে আমি নিজেও জানিনা। ফজরের আযানের আগ মুহূর্তে তনয় আর আমি ঢাকায় গিয়ে পোঁছাই। আমার ঘুম জড়ানো মুখে তনয় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে ডাকছে। আমি ঘুম কাতুরে চোখ খুলে যে মুখটা দেখতে পারলাম, সেটা ছিলো অন্যরকম একটা মুখ। গাড়ি থেকে বের হয়ে যখন তনয়ের বাসার মধ্যে প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম ওর মা গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে আছে। আমাদের আর কিছু বললো না। আমি আর তনয় সোজা আমাদের রুমে চলে গেলাম। তখনও আমার চোখে ঘুম লাগানো। আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালবেলা নীলার ডাকে আমার ঘুম ভাঙলো। ততক্ষণে হয়তো তনয় বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। এই সময় বাসায় থাকে না, ও হয়তো অফিসের কাজে বের হয়ে পরে নয়তো টংয়ের দোকানের আড্ডা দিতে বের হয়।ফ্রেশ হয়ে যখন নাস্তার টেবিলে গেলাম, গিয়ে দেখি নাস্তা করছে তনয়। সবার মাঝেই নীলা আমাকে বলে উঠল..
- ভাবি শেষ পর্যন্ত তোমার বোন মিতু আমার নেকলেসটা চুরি করলো? মিতু আমাদের বাসা থেকে যাওয়ার পরে আমি আমার নেকলেস টা খুঁজে পাচ্ছি না।
-মানে??
-যেটা শুনতেছো এটাই।
- নীলা তুই এসব কি বলছিস? এসব মিতু কেনো করতে যাবে।মিতু তো এমন ধরনের মেয়ে নয়। কেনো তো নেকলেস চুরি করবে? আমরা নিম্ন ফ্যামিলির মেয়ে হতে পারি কিন্তু তোদের মত আমাদের মাঝে আভিজাত্য বলতে কিছুই নেই। আমাদের কখনো অহেতুক কোন চাহিদা নেই। তোর কোথাও ভুল হচ্ছে বোন। একটু ভালো করে খুঁজে দেখ।
- বৌমা আমরা ভালো করেই খুঁজে দেখেছি। কিন্তু নীলার নেকলেসটা পাইনি। আর তোমরা যাওয়ার পরে আমাদের বাসায় কেউই আসেনি। তোমরা যখন বাসায় ছিলা তখনও নীলা ওর নেকলেসটা দেখছে। তাহলে তোমরা চলে যাওয়ার পরে মানে মিতু চলে যাওয়ার পরে আর পাইনি। অনেক খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।তুমি নিবে না জানি, কিন্তু..
- মা আমার বোন এমন নয়।মিতু কেনই বা চুরি করবে? ওর যদি কখনো কোন কিছু ভাল লাগে ওতো সেটা আমার কাছে প্রকাশ করে। প্লিজ আপনারা একটু ভালোমতো মনে করে দেখুন। কোথায় রেখেছেন না কি করেছেন?
তনয় চুপচাপ করে খেয়ে যাচ্ছে। কারো মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমি ওর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমি অপেক্ষায় আছি তনয় কি বলবে। আমার অপেক্ষার প্রহর কাটিয়েই তনয় বলে উঠলো...
- আমারও প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না লামিয়া, যে তোমার বোন এমন একটা কাজ করবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস না করে আর পারছিনা। কারণ তোমার মনে আছে একদিন আমার কাছে একটা সুন্দর নেকলেস গিফট চেয়ে ছিল তোমার বোন?যখন সবার সামনে ওই নেকলেসটা আমি আমার বোনকে দিয়েছিলাম তখন কিন্তু মৃদু হেসে বলেছিল যে ভাইয়া এই নেকলেসটা আমার পছন্দ হয়েছে। একসময় আমাকে এমন একটা নেকলেস গিফট করবেন। আমার মনে হচ্ছে কি তুমি মিতুকে একটু ভালোমতো ধীরেসুস্থে জিজ্ঞেস করে দেখো। আসলে ব্যাপারটা খুব লজ্জাজনক। আর এটা কাউকে শেয়ার করাও যাবে না।তোমার বাবা মা শুনলেও কষ্ট পাবে। কাউকে কিছু বলা যাবে না। তুমি মিতুকে ফোন দিয়ে সময় করে ওর কাছে আস্তে আস্তে কিছু একটা জিজ্ঞেস করো।
আমি ওদের সামনে আর কিছু বলতে পারলাম না। কারণ এখন ওরা সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে ছোট করতে ব্যস্ত।
খাবার টেবিলে বসে আছি কিন্তু কোন কিছু খাইতে আমার মন চাচ্ছে না। ওয়াশ রুমের দরজা আটকে ইচ্ছামত কেঁদে নিলাম। কোন শব্দ বের হচ্ছে না।চোখ দিয়ে শুধু টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। আর আমি কিভাবে মিতুর কাছে এই ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবো?মিতু আমাকে ভুল বুঝবে।অনেক কষ্ট পাবে। আমি ভেবে পাচ্ছি না এখন কি করবো।
অনেকক্ষণ পরে তনয় রুমে আসলো। রুমে এসে আমার পাশে এসে বসল।
আমি তনয়কে বললাম...
- তনয় আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে মিতুকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারবোনা। আমাকে তুমি একটু সময় দাও। আমি নীলাকে ঠিক এমন একটা নেকলেস বানিয়ে দিবো। তবুও প্লিজ আমাদের অপমান কোরোনা। আর মিতুর কাছে যদি জিজ্ঞেস করি মিতু তো অনেক কষ্ট পাবে। তার আমি আমার বোনকে কখনো কষ্ট দিতে পারব না।
.........(আমি কাঁদছি তবুও তনয়ের কোনো সাড়াশব্দ আসলো না)
কারণ আমার বোন মিতুর কারণেই হয়তো আজ আমি বেঁচে আছি। যখন আমি রক্তশূন্যতায় ভুগছিলাম তখন কোথাও রক্ত খুঁজে পাচ্ছিলাম না।মিতুর শরীরে রক্ত অল্প থাকার সত্বেও মিতু আমাকে দুই দুই ব্যাগ রক্ত দেয়। আমি এর প্রতিদান কোনদিনও ভুলতে পারবো না। জানো তনয়! মিতু আমার কাছে কখনো কোনোদিন কোনো কিছু আবদার করেনি। কালকে মিতু হয়তো আমার কাছে একটা কিছু চাইতো। আমি জানি মিতু কি চাইবে। হয়তো তুমিও জানো। কিন্তু মিতু যদি চায় ওকে আমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারব না। আমি জানি মিতু আমার সাথে অন্যায় করছে, তার পরেও আমার সবকিছু ভুলে যেতে হবে। কারণ আমি হয়তো মিতুর জন্যই বেঁচে আছি। একটা কথা বলবা তনয়?(শাড়ির আচলটা মুখে গুজে)
- হ্যাঁ বল কি জানতে চাও তুমি?
- তোমার কি মনে হয় যে মিতু এমন একটা কাজ করবে?
- স্বার্থের জন্য কত কিছুই না করে তাই না? আর হয়তো মাথায় কোনো শয়তানি চেপেছে তাই কখন কোন ভুলটা করে ফেলে তা কেউ নিজেও জানেনা।
- তারমানে তুমিও মিতুকে অবিশ্বাস করছো।
- আমিতো অবিশ্বাসের কথা কোন কিছুই বলি নি। তবে আমার মনে হচ্ছে...
- থাক তোমার কাছে আমি আর কিছু শুনতে চাই না বা কিছু জানতেও চাই না। তবে প্লিজ তুমি আমাকে কিছুটা দিন সময় দাও আমি নীলাকে ঠিক এমন একটা নেকলেস বানিয়ে।
ঠিক তখনই আমার মনে হলো আমি তো গতকাল এই জবটা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। এখন আমি হঠাৎ করে নীলাকে এমন একটা নেকলেস কিভাবেই বা বানিয়ে দেবো। আমি তনয়ের কথামতো জব টাও ছেড়ে দিলাম। ভেবেছিলাম কিছুদিন পরে জবটা ছেড়ে দেবো কিন্তু তনয় কালকে বলার পরে আমি কেন যে জবটা ছেড়ে দিলাম।এটাও হয়তো বড় ভুল করে ফেললাম।
-মিতু এমন কাজ করবে আমার কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না।মিতু যেহেতু তনয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে হয়তো এটাও করেছে আমায় দোষারোপ করার জন্য।আমি জানি না কার মনে কি চলছে।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আমি মিতুকে ফোন দিলাম। মিতু ফোন রিসিভ করতেই মিতুকে বললাম..
- মিতু তুই আমার কাছে সত্যি করে বলবি। তুই কালকে রাতে আমার কাছে কি চেয়েছিলি? আমার কাছে তোর কি চাওয়ার আছে তোর? প্লিজ বোন আমাকে সব কিছু খুলে বলবি...
-আপু আমি.......
(চলবে...........)
🔴 Steps to Get Link 🔗
Click Ad
1. Click on Ad ⬆
2. Wait for 5 seconds
3. Come Back Here
Ad Clicked! Please wait 5 seconds...
--------